Tuesday, 4 October 2011

ব্রেইল সফটওয়্যার নিয়ে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী

বর্তমানে যে ব্রেইল পদ্ধতিতে অন্ধরা পড়াশোনা করে থাকে তার উদ্ভাবন ১৮২৫ সালে। ফ্রান্সের এক অন্ধ ব্যক্তি লুইস ব্রেইল এটি আবিষ্কার করেন এবং পরে এটার উন্নয়ন ঘটে।বাংলা ভাষায় ব্রেইলের ব্যবহার আরো একধাপ এগিয়ে গেল। এটি সম্ভব হয়েছে এক ধরনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এ সফটওয়্যার সরাসরি বাংলা থেকে ব্রেইলে অনুবাদ করে দেবে ভাষাকে। এতে দেশে ব্রেইলের বইয়ের যে অভাব রয়েছে তা অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলা থেকে ব্রেইলে অনুবাদের এ যুগান্তকারী আবিষ্কারটি করেছেন ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। ব্রেইলের এ সফটওয়্যারের কল্যাণে এ সংক্রান্ত বই সহজে কম খরচে এখন সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের এ আবিষ্কারটি সমপ্রতি ঢাকার ধানম-িতে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। এই সেমিনারের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক সোসাইটি। এ সেমিনারের সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান এবং প্রধান অতিথি ছিলেন ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. আমিনুল ইসলাম।
এছাড়া অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডেফোডিল ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মো. ফখরে হাসান, বাংলাদেশ ইলেক্ট্রনিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ড. ফজলুল হক, বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি ও গবেষকরা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। ড. আনোয়ার হোসেন যে বিষয়টিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন তার প্রবন্ধে তা হলো_ স্বাভাবিক মানুষের জন্য লেখা বই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা পড়তে পারে না। এ জন্য প্রয়োজন ডিজিটাল বই। এ ডিজিটাল বইয়ের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা পড়তে সক্ষম হবে।
বর্তমানে যে ব্রেইল পদ্ধতিতে অন্ধরা পড়াশোনা করে থাকে তার উদ্ভাবন ১৮২৫ সালে। ফ্রান্সের এক অন্ধ ব্যক্তি লুইস ব্রেইল এটি আবিষ্কার করেন এবং পরে এটার উন্নয়ন ঘটে। ব্রেইল যে পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন তার অনুপ্রেরণা আসে নেপোলিয়নের সময়ে চার্লস বারবিয়েরের মাধ্যমে। বারবিয়ের এক ধরনের চিহ্নভিত্তিক ভাষা বের করেন যেটি নিশ্চুপে বা রাতে সৈন্যরা একে অপরের কাছে পাঠাতে পারে। হাতের স্পর্শের মাধ্যমে বিভিন্ন ডট দিয়ে এ ভাষা বোঝা যেত। এ ভাষার নাম ছিল নাইট লেখনি। পরে বারবিয়েরের নাইট লেখনিকে মডিফাইড করে ব্রেইল সৃষ্টি করেন ব্রেইল সিস্টেম।
এ ব্রেইল সিস্টেম এখনো অন্ধদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি ভাষা ব্যবস্থা। স্পর্শের মাধ্যমে উপলব্ধি করার এ পদ্ধতি আসলেই অসাধারণ।
কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে সব বইয়েরই ব্রেইল সংস্করণ পাওয়া যায় না। আর যে কোনো বইয়ের ব্রেইল সংস্করণের মূল্যও একটু বেশি। তাই ড. আনোয়ার হোসেন যে কোনো বইয়ের ব্রেইলে রূপান্তরের যে সফটওয়্যার আবিষ্কার করেছেন তা সত্যই প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলা থেকে ব্রেইলে রূপান্তরের এ পদ্ধতি চেষ্টা করলে অন্য যে কোনো ভাষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে আশা করা যায়।
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের এ পদ্ধতির যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তাতে বলা যায় এটি অদূর ভবিষ্যতে অন্ধদের জন্য পড়াশোনা করার এক অপার দুয়ার খুলে দেবে। ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেমিনারে সভাপতি এবং প্রধান অতিথিও একই ধরনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে এ পদ্ধতির সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট সবার পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
 

No comments:

Post a Comment