Tuesday, 4 October 2011

মাছের সেক্স পরিবর্তনের অজানা রহস্য উদ্ভাবন করলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী

ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলমসাগরে এমন কিছু মাছের বসবাস আছে যারা জীবনের একটি সময়ে এসে সেক্স পাল্টায়। পুরুষ মাছ হয়ে যায় স্ত্রী আর স্ত্রী হয় পুরুষ মাছ। প্রবাল দ্বীপে বসবাসকারী গ্রুপার () তেমনি এক ধরনের মাছ যারা প্রথমে স্ত্রী হিসেবে জন্ম নেয়, পরিপক্কতা পায় এবং এক বা একাধিকবার প্রজননে অংশ নেয়। এসব স্ত্রী মাছ সময়ের পরিক্রমায় সেক্স পাল্টিয়ে পুরুষ মাছ হিসেবে অবির্ভূত হয়। পরবর্তী জীবনে ওই পুরুষ মাছ সক্রিয় প্রজননে অংশ নেয়। মজার ব্যাপার হলো, এসব মাছ আর কখনই আগের সেক্সে ফিরে আসে না। কিন্তু গ্রুপার মাছ কিভাবে এ সেক্স পরিবর্তনের ঘটনাটি ঘটায়, এ অজানা রহস্যই উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশি তরুণ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। জাপানের ওকিনাওয়ার রিউকিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ড. আশরাফের পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল মাছের সেক্স পরিবর্তনের বিষয়টি। চলতি মাসেই তিনি এ গবেষণায় সফলতা পান। তার এ অনন্য গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ড. আশরাফ সম্প্রতি জাপানের ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ সম্মান প্রেসিডেন্ট পদকে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি জাপান সরকার প্রদত্ত ঔঝচঝ কোর্স ডক্টরাল ফেলোশিপের জন্য মনোনীত হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
ড. আশরাফ প্রথমবারের মতো তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, স্ত্রী মাছের গোনাডের মধ্যে এক ধরনের বিশেষ কোষ আছে যারা পুরুষ হরমোন (এন্ড্রোজেন) তৈরি করে। সাধারণত এসব মাছ যখন তার মূল দৈর্ঘ্যরে দুই-তৃতীয়াংশ বড় হয় তখনই এ বিশেষ কোষগুলো হরমোন বা এন্ডোজেন তৈরি শুরু করে। এরপর স্ত্রী মাছ আস্তে আস্তে পুরুষ মাছে পরিণত হয়। এ ব্যাপারে ড. আশরাফ বলেন, এ পরিবর্তনের সময় ফিমেল (স্ত্রী) স্পেসেফিক জিনগুলো আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং তাদের এক্সপ্রেশন (ঊীঢ়ৎবংংরড়হ) কমে যায়, অন্যদিকে এ সময় মেইল (পুরুষ) স্পেসেফিক জিনগুলো সক্রিয় হয় এবং তাদের এক্সপ্রেশনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এভাবেই স্ত্রী মাছ পুরুষে রূপান্তরিত হয়। গবেষক ড. আশরাফ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএসসি ফিশারিজ (অনার্স) ও এমএস ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০২ সালে তিনি ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক্স বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ২০০৩ সালে জাপান সরকার প্রদত্ত মনোবুকাগাকুশো বৃত্তি নিয়ে ওকিনাওয়ার রিউকিউ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএস শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মাছের সেক্স পরিবর্তনের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে টাঙ্গাইলে জন্ম নেয়া ড. আশরাফ স্কুল শিক্ষক মো. আবদুল মজিদ ও গৃহিণী রাশেদা মজিদের বড় ছেলে। তার সহধর্মিণী কৃষিবিদ সাবিনা রুখসানাও এ বছর মনোবুকাগাকুশো বৃত্তি নিয়ে জাপানে পিএইচডি করতে যাচ্ছেন।
ড. আশরাফ এখন মাছের সেক্স পরিবর্তনের সময় ব্রেন কি ভূমিকা পালন করে এর ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন।

No comments:

Post a Comment